কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এ কিভাবে সফলতা অর্জন করা যায়?
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এমন একটি প্রতিযোগিতা যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সীমিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখে। এটি কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র, পেশাদার প্রোগ্রামার দের পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও এখানে অংশগ্রহন করে থাকে। এটি একজন প্রোগ্রামারের দক্ষতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এখানে অংশগ্রহন করে।কেন আপনি কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এ অংশগ্রহন করবেন?
আপনার কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এ অংশগ্রহন করার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি আপনাকে আপনার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সমস্যাগুলি খুব চ্যালেঞ্জিং হয় এবং সেগুলি সমাধান করার জন্য আপনাকে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে হবে। এটি আপনাকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে এবং আপনার কর্মজীবনে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয়ত, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং আপনাকে আপনার প্রোগ্রামিং দক্ষতা বাড়াতে করতে সাহায্য করে। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানে প্রায়ই আপনাকে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং স্ট্র্যাটিজি এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করতে হয়। এটি আপনাকে নতুন প্রোগ্রামিং কন্সেপ্ট শিখতে এবং ভালোমানের এবং কার্যকরী কোড লেখার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
তৃতীয়ত, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং আপনাকে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রায়ই আপনাকে অন্যান্য প্রোগ্রামারদের সাথে কাজ করতে হবে। এটা আপনাকে কীভাবে আপনার চিন্তাভাবনা, প্রোগ্রামিং জ্ঞান ইত্যাদি শেয়ার করা এবং অন্যদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে ইত্যাদি মাধ্যমে কিভাবে অন্যের সাথে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্থাপন করতে হয় তা শিখাবে এবং এটি আপনাকে অন্যান্য প্রোগ্রামারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।কিভাবে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং শুরু করবেন
আপনি যদি কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং শিখতে আগ্রহী হন তবে শুরু করার জন্য আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, আপনাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর ফান্ডামেন্টালস বিষয়াবলি শিখতে হবে। ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম এবং প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা আবশ্যক। আপনি চাইলে অনলাইন এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এবং এর ফান্ডামেন্টালস শিখতে পারেন।
একবার আপনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মূল বিষয়গুলি শিখে গেলে, আপনি প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং সমস্যা অনুশীলন শুরু করতে পারেন। এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সমস্যা সলভ করা যায়, যেমCodeforce, HackerRank এবং Topcoder। এছাড়াও আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্য প্রোগ্রামিং কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এর বিভিন্য জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
আপনি কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের অনুশীলন করার সাথে সাথে আপনি আপনার সমস্যা সমাধান, প্রোগ্রামিং এবং যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শুরু করবেন। কঠোর পরিশ্রমের সাথে আপনি একজন কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামার হতে পারপ্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং শুরু করার জন্য কিছু টিপস:
প্রথমত বেশ কয়েকটি ইফেক্টিভ কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং কমিউনিটিতে যোগ দিন। অনেক অনলাইন এবং অফলাইন কমিউনিটি রয়েছে যেখানে আপনি অন্যান্য কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামারদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। এই কমিউনিটি আপনাকে বিভিন্য প্রকার সাপোর্ট, পরামর্শ এবং রিসোর্স শেয়ার করতে পারবে।
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এর জন্য C, C++, C#, Java এইসকল ল্যাংগুয়েজ চয়েজ করা বেটার। চাইলে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজও চয়েজ করতে পারেন। তবে ভুলে যাবেন না যে প্রোগ্রামিং আর প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ কিন্তু এক জিনিশ না। :p
ডেটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করুন এটি প্রোগ্রামিং জগতে আপনার অবস্থান শক্ত করে তুলবে, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়।
প্রোগ্রামিং ইভেন্টে যোগ দিন। বিশ্বজুড়ে এমনকি বাংলাদেশেও অনেক কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এই ইভেন্টগুলিতে অন্যান্য প্রোগ্রামারদের সাথে প্রতিযোগিতা করার আয়োজন করা হয়। এইসকল ইভেন্টে যোগ দিলে দক্ষতা তো বাড়েই, দেশের এবং বিশ্বের অসংখ্য নামী-দামী প্রোগ্রামারদের সাথেও সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বই এবং আর্টিকেল পড়ুন। অনেক বই এবং আর্টিকেল রয়েছে যা আপনাকে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে। এই রিসোর্সগুলি আপনাকে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামারদের কাছ থেকে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।
নিয়মিত অনুশীলন করুন। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এ উন্নতি করার সর্বোত্তম উপায় হল নিয়মিত অনুশীলন করা। প্রতিদিন অন্তত ২০টি সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করুন। এর বেশি হলেও সমস্যা নেই। এমন না যে প্রতিদিনই আপনি ২০টি সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। এমনও হতে পারে একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই আটকে আছেন ঘন্টার পর ঘন্টা ( কিংবা দিনের পর দিন :-D ) । এক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটি প্রোগ্রামিং লাইফের একটা অংশ।
শুরুতেই কোড না করে সমস্যাটিকে বোঝার চেষ্টা করুন। সমস্যা না বুঝলে সমাধান সম্ভব নয়।
প্রবলেম সলভ না করতে পারার বেশ কিছু কারন থাকতে পারে, প্রোগ্রামিং এর যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব, মাথায় চিন্তা না আসা, সমস্যা বুঝতে না পারা ইত্যাদি। এমন কোনো সমস্যা হলে সমাধান খুজে বের করুন, প্রয়োজনে প্রোগ্রামিং কমিউনিটির সাহায্য নিন।
হাল ছাড়বেন না। কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু এটি খুব ফলপ্রসূও। আপনি যদি প্রথমে সফল না হন তবে হাল ছেড়ে দেবেন না। অনুশীলন করুন এবং শিখতে থাকুন, ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকেন আমি আশা করি এই ব্লগটি আপনাকে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করেছে।
একজন সফল প্রোগ্রামার হতে হলে আপনার নিম্নবর্তী স্কীলগুলো থাকতে হবেঃ
ইংরেজির উপরে ভালো দক্ষতা (প্রোগ্রামিং নিয়ে লেখা প্রায় সব রিসোর্স ই ইংরেজিতে)
একটা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের / ফ্রেমওয়ার্কের / লাইব্রেরীর ডকুমেন্টেশন পড়ার ও বোঝার ধৈর্য
কোনো প্রোগ্রামিং সমস্যায় পরলে তা সমাধান করার মানসিকতা
গুগোল সার্চ করে আপনি যা জানতে চাচ্ছেন তা কম সময়ে বের করতে পারার দক্ষতা
আপনার সিনিয়রদের কোড ও অন্যান্য জায়গা (ওপেন সোর্স প্রজেক্ট, অনলাইন টিউটোরিয়াল) থেকে নতুন কন্সেপ্ট, টেকনিক ও কোডিং স্টাইল আয়ত্ত করার সামর্থ
সম্পূর্ন নতুন কোনো একটি ল্যাংগুয়েজ / ফ্রেমওয়ার্ক / লাইব্রেরী আয়ত্ত করার ফ্লেক্সিবিলিটি
আপনার বাছাই করা যেকোনো একটি বা দুইটি ল্যাংগুয়েজের ভেতরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানা
কোন ধরনের প্রজেক্টের জন্য কোন ল্যাংগুয়েজ/ ফ্রেমওয়ার্ক / লাইব্রেরী বেশি উপযুক্ত সে সম্পর্কে জানা
যে ল্যাংগুয়েজ শিখছেন সেটা দিয়ে ছোটখাটো কয়েকটি প্রজেক্ট বানিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা
সময় সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করার দক্ষতা
টাচ টাইপিং (এই স্কীল না থাকলে সময় কুলাতে পারবেন না)
সর্বশেষে, সবসময় নতুন কিছু সেখার জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রাখা
এখানে লক্ষ্য করলে দেখবেন, এই পয়েন্টগুলোর মধ্যে কোনো বিশেষ প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের নাম দেইনি, এবং এটি পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত। আপনি কোনো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বা ফ্রেমওয়ার্ক বা লাইব্রেরী শিখে সফল প্রোগ্রামার হতে পারবেন না। এগুলো কার্যসম্পাদনের মাধ্যম মাত্র, এগুলো কোথায়, কিভাবে ব্যবহার হবে এবং কতখানি কার্যকর হবে তা প্রোগ্রামারদের উপর নির্ভর করে। এবং সব প্রজেক্টের জন্য সব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আদর্শ নাও হতে পারে, এজন্য প্রয়োজনমতো নতুন ল্যাংগুয়েজ / ফ্রেমওয়ার্ক সেখার সামর্থ থাকতে হবে। এর মানে এ নয় যে আপনাকে সব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে দক্ষতা থাকতে হবে - একটা ল্যাংগুয়েজের সিনটাক্স শিখতে তেমন সময় লাগে না, কিন্তু দক্ষতা অর্জন করতে হলে তার পেছনে কয়েক বছর সময় ব্যয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
Mafuzur Rahman Shan.
BSC (engr) in the Department of Computer Science And Engineering at Manarat International University.
0 Comments