স্পিকিং স্কিল ডেভেলপ করার ৬ সিম্পল স্টেপস।

স্টেপ-১. পরিচিতদের সাথে মাইক্রো স্পিকিং
খেয়াল করে, প্ল্যান করে: তোমার ক্লাসমেন্ট বা ফ্রেন্ডকেই ছোট্ট, পুচকা একটা প্রশ্ন করো-- "দোস্ত এই অংকটা একটু বুঝায় দে।", "দোস, ১২ হাজারের মধ্যে মোবাইল কিনবো। কোনটা কিনলে ভালো হয়?", অথবা “মিম, তুমি কি ক্যাফেতে যাচ্ছে !!! “ আগে থেকে প্ল্যান করে এইসব খুচরা প্রশ্ন করতে পারাটা তোমার মধ্যে স্পিকিং রিলেটেড মাইক্রো লেভেলের একটা কনফিডেন্স তৈরি করবে। আবার ওরা যেহেতু তোমার ফ্রেন্ড তাই হেসিটেশনও লাগবে না। তবে কয়েক সপ্তাহ প্রশ্ন করার পর: একই সিস্টেমে: ক্লাসে স্যার বা ম্যাম কে রিকুয়েস্ট করবে-- "ম্যাম, এই জিনিসটা একটু আরেকবার বুঝিয়ে দিবেন?" বা এই লাইনটা কিভাবে আসলো?

ধীরে ধীরে সিনিয়র ভাইয়া বা বা আপুকে প্রশ্ন করবে-- ভাই, আপনি জব টা কেমনে পাইছেন। বা আপু আপনার থিসিস কোন টপিকে ছিল। বা আপনি স্কলারশিপ ক্যামনে পাইছেন। বা নেক্সট সেমিস্টারে এই কোর্স আসবে। কোর্সটা কেমন?
পরিচিত মানুষদেরকে প্রশ্ন করে, হেল্প চেয়ে তোমার ভিতরে মাইক্রো লেভেলের স্পিকিং এর একটা কমফোর্ট লেভেল চলে আসবে।

স্টেপ-২: অপরিচিতদের সাথে মাইক্রো স্পিকিং
মাঝে মধ্যে আমি এই চ্যালেঞ্জ নিতাম-- আজকে মিনিমাম একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলবো। হয়তো বাসে করে টিউশনিতে যাচ্ছি তখন দেখতে শুনতে ভালো (অজ্ঞান পার্টি টাইপ কেউ না) এমন একজন পাশে বসছে-- আমি জিজ্ঞেস করতেছি ভাই আপনি কি করেন? বা হাতে একটা বই অথবা ব্যাগ আছে সেটা কই থেকে নিছেন এই টাইপের খুবই ক্যাজুয়াল কিউরিসিটি টাইপের সিম্পল একটা প্রশ্ন। তারপরেও অপরিচিতদের প্রশ্ন করার অনেক সাহস লাগে।

বিদেশেও আমি চ্যালেঞ্জ নিতাম। আজকে দশজনকে গুড মর্নিং বলবো। দেখা যায়। ২-৩ জন শুনে, না শুনার ভান করে চলে যাচ্ছে। ৪-৫জন রিপ্লাই হিসেবে গুড মর্নিং বলে। আবার ২-১ খুবই আন্তরিক ভাবে রিপ্লাই দেয়। তবে কেউ রিপ্লাই দিক বা না দিক। আমার কাজ হচ্ছে বলতে পারাটা।

অনলাইনেও একটু গুছিয়ে ফর্মালভাবে (প্রফেশনাল ভাবে) ইনবক্স করি। হেল্প চাই। লিংকডইন এ নক দেই। বেশিরভাগ রিপ্লাই দেয় না। কেউ কেউ সিন্ রেখে দেয়। তাও নক দেই। এইটা কমিউনিকেশন এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ।

স্টেপ-৩: মিনি স্পিকিং
আজীবন প্রশ্ন করে গেলে তোমার স্পিকিং লেভেল বাড়বে না। তাই মাঝে মধ্যে তোমাকে উত্তরও দিতে হবে। হতে পারে ক্লাসে কেউ কিছু একটা বুঝতেছে না। তুমি যতটুকু পারো বুঝানোর চেষ্টা করো। কেউ কোন ঠিকানা জানতে চাচ্ছে। তাকে হেল্প করো। সম্ভব হলে কোন একটা ক্লাবে জয়েন করো। সেখানে মিটিংয়ে জয়েন করবে। দায়িত্ব নিলে সেটা নিয়ে কথা বলার দরকার পড়বে।

কোন ক্লাব না পেলে তোমার ফ্রেন্ডরা মিলেই একটা ক্লাব করে ফেলবে। আমি যখন হলে ছিলাম আমার ফ্রেন্ড ফয়সাল এমন একটা ইংরেজি শেখার ফ্রেন্ড সার্কেল করে ফেলছিল। সে প্রতি মঙ্গলবার রাতে আমরা আড্ডা দিতাম। প্রেজেন্টেশনও দিতাম। যার যে টপিক ইচ্ছা। শর্ত একটাই আমরা শুধু ইংরেজিতে কথা বলবো।

সুযোগ পেলে বিভিন্ন ইভেন্টে ভলান্টিয়ারিং করার চেষ্টা করবে। বইমেলা বা কোন এক্সিবিশন এর স্টল এ সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হতে পারলে প্রচুর কাস্টমারের সাথে কথা বলতে হবে। এতে তোমার স্পিকিং এবং কমিউনিকেশন স্কিল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে।

স্টেপ ৪: অডিও জার্নাল
খুবই সিম্পল। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে জাস্ট ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় নিবে। এর বেশি দরকার নাই। এবং অডিও রেকর্ড করে ফেলবে। সেখানে এক নাগাড়ে বলে যাবে সারাদিন তুমি কী কী করছো। মেইন মেইন হাইলাইটস। এইটা ১০ থেকে ১৫ দিন করো। দেখবে একটা ফ্লুয়েন্সি চলে আসছে। তারপর আরো ১০ থেকে ১৫ দিনের চ্যালেঞ্জ নাও। যেখানে তুমি সারাদিন এ কি কি করছো সেটার অডিও ই রেকর্ড করবে। কিন্তু এইবার ইংরেজিতে। এইভাবে ৩০ দিন অডিও রেকর্ড করলে তোমার স্পিকিং এর বেসিক জড়তা কেটে যাবে।

স্টেপ-৫:ফর্মাল প্রেজেন্টেশন
এইটুক পর্যন্ত একটা রিজনেবল পার্সনকে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে বছরে ২-৫টা ফর্মাল প্রেজেন্টেশন দিতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে। প্রতিটা প্রেজেন্টেশন হবে ৫ থেকে ১০ মিনিটের। তোমার প্রেজেন্টেশন বাংলায় বা ইংরেজিতে হতে পারে। এইটা হতে পারে ক্লাস প্রেজেন্টেশন, গ্রূপ প্রেজেন্টেশন, অথবা হতে পারে তুমি নিজে নিজেই ভিডিও ক্যামেরা অন করে রেকর্ড করে প্রেজেন্টেশন দিয়ে দিলে। যেটাই করো না কেন: একটা ফিক্সড ডেডলাইন থাকবে। টাইম ফিক্সড থাকবে। তারপর একটা টপিক ঠিক করে। সেটা নিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট গুছিয়ে সিরিয়াল অনুসারে কথা বলবে।

সম্ভব হলে গুগল স্লাইডে গিয়ে স্লাইড বানাবে। স্লাইড বানাইতে না পারলে ইউটিউবে গিয়ে সার্চ দিবে কিভাবে স্লাইড বানায়। এরপর ভিডিও রেকর্ড করে কমফোর্ট হলে সবার সাথে শেয়ার করবে। আর কমফোর্ট ফিল না করলে-- ইউটিউবে প্রাইভেট ভিডিও বা ফেইসবুকে অনলি মি হিসেবে আপলোড করে দিবে। এই কাজ বছরে ২ থেকে ৫ বার করতে পারলে তোমার ফিউচারে প্রেজেন্টেশন, ইন্টারভিউ, মিটিংস এ আর ভয় থাকবে না।

স্টেপ-৬: (অপশনাল) পাবলিক স্পিকিং:
এইটা অপশনাল। দুনিয়ার সবাইকে যে পাবলিক স্পিকিং করতে হবে। এমন কোন কথা নাই। তারপরেও করতে চাইলে-- পাবলিক স্পিকিং প্রাকটিস করার সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে ডিবেটিং ক্লাব। তুমি ডিবেট গেলে: টপিক সিলেকশন, রিসার্চ, ফ্যাক্ট খুঁজে বের করা, প্রেজেন্টেশন, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লজিক, শক্ত লজিকের আরো শক্ত রিপ্লাই, সব একবারে হয়ে যাবে।

আর কোন কারণে ডিবেট করার ইচ্ছা বা অপশন না থাকলে অন্য কোন ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ পজিশন নেয়ার চেষ্টা করো। কোন ইভেন্টে MC করার চেষ্টা করো। নিজের পছন্দের কোন টপিক বা কোন প্রোডাক্টের রিভিউ বা আর কিছু না পাইলে তাঁর পাঠ্য বইয়ের কোন টপিক এর ভিডিও নিজে নিজে রেকর্ড করে ফেলো। তারপর সেটা ইউটিউব বা ফেইসবুক গরূপে শেয়ার দিবে। প্রথম কয়েকটা জঘন্য হবে। নার্ভাসনেস কাজ করবে। টিটকারি আসবে। নেগেটিভ কমেন্ট আসবে। সেগুলার ভিতর থেকে চালিয়ে যেতে পারলে ছয় মাস এক বছর পর সিগ্নিফিক্যান্ট ইম্প্রুভ হবে।

স্পিকিং স্কিল মানে ঘন্টার পর ঘন্টা আজাইরা বক বক করা না। বরং প্রিসাইজভাবে টু দ্য পয়েন্টে কমিউনিকেট করার এবিলিটি।
কথা সবাই বলতে পারে কিন্তু সবাই কমিইউনিকেট করতে পারে না।

Github , Linkdln


Mafuzur Rahman Shan. B.Sc. in CSE at Manarat International University.