১) দিন যত যায়-- জীবন তত কঠিন হয়।
একসময় থাকে শুধু পড়ালেখার চিন্তা। এরপর আসে চাকরি পাওয়া ও সংসারের হাল ধরার চিন্তা। তারপর আসে--চাকরি, সংসারের হাল এবং বিয়ে করার চিন্তা। এরপর আসে-- চাকরি, সংসারের হাল, বিয়ে এবং শ্বশুর বাড়ির ক্যাঁচাল ম্যানেজ করার চিন্তা। তারপর আসে-- চাকরি টিকানো, সংসার টিকানো, বাচ্চা-কাচ্চা পালা, বাচ্চা-কাচ্চার স্কুল, বাবা-মা বয়স্ক হয়ে গেলে তাদের সেবা-ডাক্তার দেখানো। অর্থাৎ জীবন যত এগোবে-- জীবনের টেনশন, প্রেসার, ঝামেলা, রেসপনসিবিলিটি, জাস্ট গাণিতিক হারেই বাড়তে থাকবে। মরণের আগ পর্যন্ত আর কমবে না।




২) আসলে তোমার কোন বন্ধু নাই:
ভার্সিটি যাওয়ার এক বছরের মধ্যেই স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সাথে রিলেশন ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। চাকরিতে যাওয়ার এক বছরের মধ্যেই ভার্সিটি লাইফের বন্ধুদের সাথে আর কথা বার্তা-দেখা সাক্ষাৎ হয় না। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক, হার্ট রিঅ্যাকশন, স্যাড রিঅ্যাকশন এর মধ্যেই আটকে থাকে। আবার চাকরির প্রথম দিককার ফ্রেন্ডশিপ দশ বছর পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এইভাবে চলতে চলতে: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দেখবে তোমার অল্প কিছু নিস্তেজ পুরাণ কলিগ আর দুঃসম্পর্কীয় অল্প কিছু আত্মীয়স্বজন ছাড়া তোমার কোন বন্ধু নাই।

৩) স্থায়ী সুখশান্তি কোনদিনও পাবে না:
তোমার জীবন কখনোই স্মুথ চলবে না। দুই মাস ভালো থাকো। দেখবে পরের মাসে কথা নাই বার্তা নাই। উটকো একটা ঝামেলা চলে আসছে। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না এমন কিছু একটা হতে পারে। তারপরেও দেখবে-- কেউ তোমার জমি দখল করে ফেলছে। বা তুমি এক্সিডেন্ট করে বসছো। বা ফ্যামিলির কোন ঝামেলা চলে আসছে। অথবা কেউ অসুস্থ হয়ে গেছে কিংবা অফিসের কোন কলিগ তোমার নামে আজে বাজে কথা ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ একটা না একটা ঝামেলা লেগেই থাকবে। শান্তি পাবে না।

৪) কোনদিনও বড়লোক হতে পারবে না:
বয়স যত বাড়বে: বেতন তত বাড়বে-- টাকার দরকার তার চেয়ে আরো বেশি বাড়বে। বছর শেষে তুমি ফকির; ফকিরই থেকে যাবে। যত টাকাই কামাই করো না কেন, টানাটানি করেই তোমার জীবন চলবে। কোনদিনও: বড়লোক হতে পারবে না।

৫) প্রশংসা তোমার কপালে জুটবে না:
তুমি যদি ৯৮% ভালো কাজ করো, মানুষ ফিরেও তাকাবে না। আর যদি কোন কারণে ২% ভুল করে বসো। ব্যস, তুমি শেষ। মানুষ তোমার ভুলটা নিয়েই হাউ কাউ করে করে তোমাকে ১০০% ভিলেন বানিয়ে ফেলবে। আবার অন্য দিকে দেখবে: কেউ যদি ৯৮% খারাপ মানুষ। জাস্ট ২% ভালো কিছু করছে। তাহলে তাকে আর কে পায়। তার সেই ২% কাজকে নিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে তাকে জনদরদী, গরিবের বন্ধু বানিয়ে ফেলবে।

৬) তোমার নিজের চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই।
এক রুমে চারজন ছিলাম। ভালোই ছিলাম। হল থেকে বের হয়ে। দুইজন মিলে একটা রুম নিলাম। দেখি বিশাল জায়গা। ছয় মাস পরে এই জায়গায় আর হয় না। তারপর নিজের একটা রুম নিলাম। একবছর পরে সেটাতেও কাজ হচ্ছে না। এর কয়দিন পরে দেখা যায়। দুই-রুমের বাসা লাগতেছে। তার কিছুদিন তিন রুম বা নিজের একটা ফ্লাট। এরপর এটাতেও কাজ হয় না। গাজীপুর এর জায়গা খোঁজ। সেটা পাওয়া গেলে সেখানে দেয়াল দেয়া লাগবে। দেয়ালে কাজ হয় না। বাড়ি বানাতে হবে। অর্থাৎ চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই।

আবার স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় বাস-রিকশা-টেম্পু সবই চলে। কিন্তু একটু টাকা হাতে আসলেই: সিএনজি-বাস ভালো লাগে না। বাইক-পাঠাও লাগে। কিছুদিন পাঠাও, খ্যাপে চলার পর সেটাও ভালো লাগে না। ভাঙ্গা হইলেও একটা প্রাইভেট কার লাগবে। সেটা কিছুদিন পরে এই পার্টস নষ্ট, ওই পার্টস নষ্ট এর ক্যাঁচালে পড়ে-- এইবার নতুন একটা গাড়ি লাগবে।

অর্থাৎ ন্যাচারাল ভাবেই-- আমাদের চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই। কেন জানি আমরা সবাই--চাই চাই আরো চাই।

৭) তোমাকে কেউই বুঝবে না:
তোমার জড়তা, তোমার সংশয়, তোমার খারাপ লাগা, তোমার অনিচ্ছা, তোমার ফিলিংস দুনিয়ার কেউই বুঝবে না। কেউ কেউ তোমাকে উপদেশ দিবে। তোমার জন্য দোয়াও করবে। তারপরেও তারা তোমাকে ১০০% বুঝবে না। ১০০% ফিল করবে না। উল্টা পাল্টা কিছু জ্ঞান ঝেড়ে যাবে। কিন্তু তোমার সিচুয়েশন ভালোভাবে শোনার চেষ্টাও করবে না। এমনকি টাকা দিয়ে সাইকোলজিস্ট দেখাতে গেলেও সেই ব্যাটা সময় নিয়ে তোমার কথা শুনবে না। অর্ধেক শুনে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে নেক্সট রোগীকে ডাক দিবে।

৮) আফসোস নিয়েই বাঁচতে হবে।
জীবনে যত কিছু আশা করবে তার ৭০-৮০% জিনিসই পাবে না। এমনকি তুমি যে জিনিসের জন্য যোগ্য। যে জিনিস তুমি ডিজার্ভ করবে সেগুলারও বেশিরভাগ পাবে না।

আবার তুমি যদি মনে করো। ঠিকাছে আমি লোভ সংবরণ করবো। চাই চাই, খাই খাই করবো না। নিজেকে কন্ট্রোল করবো। তারপরেও দেখবে-- অন্যরা করতেছে, ঘুরতে যাচ্ছে, গাড়ি বাড়ি করছে। তুমি করতে পারোনি দেখে-- আফসোস হচ্ছে। হয়তো নিজেকে শ্বান্তনা দেয়ার জন্য অনেক কিছু বলবে কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই আফসোস হবে। আক্ষেপ হবে। ইশ, আমি যদি করতে পারতাম। ইশ, আমি যদি আমার সন্তানদের জন্য আরেকটু বেশি করে যেতে পারতাম।

৯) মানুষের উপকার করবে। সে স্বীকার তো করবেই না। উল্টা তোমার বদনাম করে বেড়াবে। কিছু মানুষ তোমার টাকা মেরে দিবে। কিছু মানুষ ইচ্ছা করে তোমার ক্ষতি করবে। কোন দরকার নাই। তাও তোমার সাথে শত্রুতা করবে।

১০) কেউ তোমাকে মনে রাখবে না।
আজ থেকে দুইশ, চারশো, পাঁচশো, এক হাজার, দুই হাজার বছর আগে দুনিয়াটা বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ ছিল। তাদের ৯৯.৯৯৯৯৯৯% মানুষের কথা আমরা জানি না। এমনকি আমার দাদার দাদা কে ছিল সেটাই আমি জানি না। একইভাবে দেড়শ দুইশ বছর পরে তোমাকেও কেউ মনে রাখবে না।

১১) তোমার লাইফের উপরে তোমার কোন কন্ট্রাল নাই
তুমি ভালো থাকবে; নাকি খারাপ থাকবে সেটা তোমার উপরে না। বরং নির্ভর করে অন্যদের উপরে। ধরো, তুমি রাস্তায় বের হলে। এখন তুমি সুস্থভাবে বাসায় ফিরবে নাকি ফিরবে না। সেটা নির্ভর করে বাসের ড্রাইভারের উপরে, রাস্তার গর্তের উপরে, অন্য বাস, ট্রাক, টেম্পু, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি এর উপরে। এমনকি তুমি বাসায় বসে থাকলে ডেঙ্গু কামড়াবে কিনা, গ্যাসের সিলিন্ডার ব্রাস্ট করবে কিনা, বিল্ডিং ধসে পড়বে কিনা,ভূমিকম্প হবে কিনা। কোনটাতেই তোমার কোন কন্ট্রোল নাই।

একইভাবে কার যে কখন মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে যাবে। কার যে কখন ক্যান্সার হবে। সে জানে না। তার কোন কন্ট্রোল নাই।

১২) অর্জন করলেও উপভোগ করতে পারবে না
যখন সময় থাকবে তখন টাকা থাকবে না। আর যখন টাকা থাকবে তখন সময় থাকবে না। যখন সব খাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন খাবার কেনার টাকা থাকবে না। আবার যখন খাবার থাকবে তখন ডায়বেটিস-প্রেসারের জন্য কিছুই খেতে পারবে না। একইভাবে যখন গাড়ি-বাড়ি থাকবে না। তখন এইগুলা ইউজ করার মানুষ থাকবে। আর যখন বড় বাড়ি, দামি গাড়ি থাকবে তখন দেখবে এইগুলা দেখার মানুষ নাই। ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনি বিদেশ স্যাটেল হয়ে চলে গেছে। তুমি আর তোমার জীবন সঙ্গিনী দেশে একাকী পড়ে আছো।

কথাগুলো অনেক অনেক ডিমোটিভেটিং। এইটাই দুনিয়ার বাস্তবতা। এইটাই লাইফ সাইকেল। সেটা তুমি মানো আর না মানো। হতাশা, আক্ষেপ, ঝামেলার মধ্যে দুই এক টুকরা অর্জন এর স্মৃতি নিয়েই জীবন শেষ হবে। জীবনে পাওয়ার চাইতে না পাওয়ার হিসেব অনেক লম্বা হবে। সুখের চাইতে দুঃখের দিন বেশি হবে। আরামের চাইতে কষ্টের দিন বেশি হবে।
এরপরেও সেই দুই সুখস্মৃতি, দুই একটা অর্জন মনে করে শেষ বয়সে অল্প হলেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটবে। সেই হাসি নিয়েই হয়তো চোখ বুজবে। সেটাও বা কম কি?






Mafuzur Rahman Shan.
B.Sc. in CSE at Manarat International University.